জানুয়ারি ৮, ২০২৩
সাতক্ষীরায় জনভোগান্তি নিরসনের দাবিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি’র সংবাদ সম্মেলন
পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট সময়ে কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় প্রতিদিন ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ। সেই মানুষদের কষ্ট লাঘবের কথা ভেবে ‘পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অফিসসূচি নির্ধারণপূর্বক’ জনভোগান্তি নিরসনের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (০৮ জানুয়ারি ২০২৩) সকাল ১০.৪৫ মিনিটে সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট মোড়স্থ স.ম. আলাউদ্দিন চত্তরে এ সংবাদ সংম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীর জেলা কমিটি’র আহবায়ক এটিএম রইফ উদ্দীন সরদার, পৌর কমিটির আহবায়ক মো. বায়েজীদ হাসান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীর জেলা কমিটি’র সদস্য সচিব ডা. মো. মুনসুর রহমান। তিনি বলেন, আপনারা অধিকাংশই অবগত জেলার ৭৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ২ টি পৌরসভায় সর্বমোট ১০৪০ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। ওই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা চেয়ারম্যান/মেয়র এবং কাউন্সিলর/মেম্বার পদমর্যাদার অধিকারী। জনগণ স্থানীয় সরকারের যত সেবা পেয়ে থাকে, তার শুরু হয় পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে। ফলে সেখানে সেবা নিতে মানুষ বেশি ভিড় করে। বিশেষ করে নাগরিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ওয়ারেশ কায়েম সনদ, বেকারত্ব সনদ, ভূমিহীন সনদ, বিবাহিত ও অবিবাহিত সনদের জন্য। এই সনদগুলো নাগরিকের রাষ্ট্রীয় যেকোনো জরুরি কাজে লাগে (চাকুরি, পাসপোর্ট, নামজারি, আদালতে মামলা, জমির রেজিষ্ট্রি)। কিন্তু দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৬১ নং আইন) এর প্রথম অধ্যায়ের প্রারম্ভিক থেকে শুরু করে সপ্তদশ অধ্যায়ে বিবিধ নামক বিভিন্ন আলোচ্য বিষয় (১ থেকে ১০৮ টি ধারা) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অথচ ওই বিষয়গুলোর মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি’র কোনো তথ্য সন্নিবেশিত না হওয়ায় এসব সনদ পেতে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। জন্মনিবন্ধন করতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অহরহ। এছাড়াও জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রেও নাগরিকদের একই ভোগান্তি। শুধু তাই নয় সরকারি বা বেসরকারি হসপিটালের চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে যাওয়া রোগি বা নাগরিকদের ব্যবস্থাপত্রে/প্রেসক্রিপশনে নামের বানান ভুলের ছড়াছড়ি। ফলে ওই সকল নগরিকদের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরে বিশেষ করে আদালতের মামলার ক্ষেত্রে ব্যপকতর প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। উপরোক্ত বিষয় সকলে জানলেও প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। তবে সরকার রাষ্ট্রের এত শত উন্নয়ন কর্মকান্ডের তথ্য চিত্র সাধারণ জনগনের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও উপরোক্ত বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। তিনি আরও বলেন, পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে মেয়র/চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ওয়ারেশ কায়েম সনদ নিয়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ জনগণ সরকার নির্ধারিত ১১৭০ টাকা খরচে জমির নামজারি করতে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছে। এতে নিরীহ জনসাধারণের কাছ থেকে কতিপয় দালাল চক্র জমির নামজারি করার নামে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত লুপেও নিচ্ছেন। এদিকে জমির নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদনের পর তা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। তারপরে উক্ত আবেদনের হ্যান্ড কপি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যায় সেবা গ্রহীতারা। এরপর শুরু হয় দরকষাকষি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন প্রদানের নামে ১ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজারের অধিক টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে থাকে। পরবর্তীতে চেকিং ও সার্ভেয়ারকেও চা খেতে টাকা দিতে হয়। এতো কিছুর পরেও সরকার নির্ধারিত সময় অর্থাৎ জমির নামজারি ২৮ দিনের মধ্যেও সম্পন্ন করতে পারছে না সেবা গ্রহীতা। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০ দিনেও পাচ্ছে না তারা। তবে কথিত দালালদের কাছে জমির নামজারি করাতে দিলে তা দ্রæত হয়ে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত বলছেন আমাদের দপ্তরসমূহে কোনো প্রকার অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয় না। উক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বর মাসে জেলার স্থানীয় এক দৈনিক পত্রিকায় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছে তা নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। কিন্তু তদন্ত তো পড়ে মরুক- গ্রামের সহজ-সরল ও নিরক্ষর মানুষ ওই দপ্তর থেকে সেবা পাচ্ছে না। তাছাড়া পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সাধারণ জনগণের সেবা তো দূরের কথা, কোনো তথ্য পেতেও কত যে ভোগান্তি হয়, তা সেখানে না গেলে বোঝবে না কেউ। বিশেষত এখন ডিজিটাল নিবন্ধন, ডিজিটাল পাসপোর্ট ও ডিজিটাল নামজারি হওয়ায় দুর্নীতি ও হয়রানি দুটিই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বোর্ডে পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য জন্মনিবন্ধন খুবই প্রয়োজন। আবার দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন ভুল তথ্য রয়েছে। যাঁদের জন্ম ২০০১ সালের পরে, তাদের বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন করাতে হয় আগে। তাই গ্রাহকদের পোহাতে হয় হয়রানি ও দুর্নীতির ধকল। তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের। যেখানে ৫০ বা ১০০ টাকায় সংশোধন করা সম্ভব, সেখানে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। গ্রাহকও বাধ্য হন টাকা দিতে। কেননা, জন্মনিবন্ধনে ভুল থাকলে বিশেষ কাজ আটকে যায়। এছাড়াও কয়েকটি মৌজা ব্যতীত বাকি মৌজাগুলোর আরএস রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। সেখানের নাম সংশোধনের জন্য সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কাছে আবাদেন করেও মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে তবে তার কোনো সুফল পাচ্ছে না জনগণ। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যাঁরা অস্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, তাঁরা সনদ নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার পাঁয়তারা করা হয়। ডিজিটাল হওয়ায় সুযোগ বেড়েছে বটে, তবে দুর্নীতিও বেড়েছে। প্রাথমিকভাবে কাউন্সিলর/ ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর লাগে। চূড়ান্ত সনদে পৌরসভার মেয়র/ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর লাগে। এ ক্ষেত্রে টাকা নেওয়ার অভিযোগ না থাকলেও কার্যালয়ে সময়মতো তাঁদের না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জনগণ ভোট দিয়ে কাউন্সিলর/ ইউপি সদস্য ও পৌরসভার মেয়র/চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন। কিন্তু কাজের সময় তাঁদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান/মেয়র এবং কাউন্সিলর/মেম্বারদের একটি নির্দিষ্ট সময়-সূচি’র মধ্যে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। 8,645,403 total views, 1,755 views today |
|
|
|